কমান্ড লাইন কি?
কমান্ড লাইন হচ্ছে আমাদের কম্পিউটারকে পরিচালনা করার একমাত্র পথ। কমান্ড লাইন ব্যবহার করে আমারা আমাদের অনেক কাজ খুবই তারাতাড়ি সম্পূর্ণ করে ফেলতে পাড়ি। কমান্ড লাইনের সাহায্যে আমরা যেই কাজটা করতে চাচ্ছি ঠিক সেই কাজটাই খুব দ্রুত করতে পাড়ি।
একটি সহজ উদাহরণের সাহায্যে বিষয়টি বুঝতে চেস্টা করি চলেন, ধরে নিন আপনি এখন একসাথে বিশটি ফোল্ডার তৈরি করতে চাচ্ছেন তা কিন্তু আপনি মাউস দিয়ে ক্লিক করে করে করতে অনেক সময় লাগবে কিন্তু এই কাজটাই কমান্ড লাইন দিয়ে আপনি কয়েক সেকেন্ডে করে ফেলতে পাড়বেন। আশাকরি বুঝতে পেরেছেন কমান্ড লাইনে আপনি কত দ্রুত যেকোনো কাজ করতে পাড়বেন।
কমান্ড লাইন ব্যবহার করা প্রথম প্রথম একটু ঝামেলার এবং জটিল মনে হতে পারে। কিন্তু ব্যবহার করতে করতে একটা সময় আসবে তখন দেখবেন আর গ্রাফিকাল ইউজার ইন্টারফেস ব্যবহার করতে ভালো লাগবে নাহ। তখন শুধুমাত্র কমান্ড লাইনই ব্যবহার করবেন।
আপনি যদি উইন্ডোজ ব্যবহারকারী হয়ে থাকেন কমান্ড লাইনের সম্পূর্ণ পাওয়ার ব্যবহার করার জন্য আপনাকে থার্ড পার্টি কমান্ড লাইন ব্যবহার করতে হবে কারণ উইন্ডোজের সাথে কমান্ড লাইন খুব বেশী পাওয়ারফুল না। কাজ চালিয়ে যাওয়ার মতো হলেও অনেক কাজই এটা দিয়ে করতে পাড়বেন নাহ। ম্যাক ও লিনাক্স ইউজার হলে চিন্তার কোনো কারণ নেই কারণ এই দুটির সাথেই খুবই ভালো মানের কমান্ড লাইন রয়েছে। আমরা উইন্ডোজে কিভাবে কমান্ড লাইন ব্যবহার করবো তাই নিয়ে আজকে বিস্তারিত আলোচনা করবো। আমারা যে কমান্ড গুলো নিয়ে আলোচনা করবো তার সবগুলো কমান্ডই লিনাক্স ও ম্যাকে সাপোর্ট করবে।
ইউন্ডোজের জন্য জনপ্রিয় দুইটা থার্ড পার্টি কমান্ড লাইন নিয়ে আমরা কাজ করবো
১/ Cmder: এটা অনেক লাইটওয়েট এবং আমার এই কমান্ড লাইন টুলসটা ব্যবহার করতে খুবই ভালো লাগে। এটার একই সাথে সেটাপ ভার্শন এবং পোর্টেবল ভার্শন দুইটাই পাবেন তাদের ওয়েবসাইটে। অন্যান্য সফটওয়্যার যেভাবে ইন্সটল করেন ওই ভাবেই ডাউনলোড করে এইটা সেটাপ করবেন।
২/ Git Bash: আপনি যদি গিট ব্যবহার করেন তাহলে আপনি এটা ব্যবহার করছেন অলরেডি। আর আপনি যদি গিট ব্যবহার করেন তাহলে অবশ্যই কমান্ড লাইনের ব্যাসিক আপনার এতোদিনে ভালো মতোই জানা হয়ে গিয়েছে। তারপরেও যারা গিট ব্যবহার করেন নাহ বা চিনেন নাহ তাদের জন্যে আজকের এই পোস্ট, আপনি যদি প্রোগ্রামার হোন তাহলে আপনার ভবিষ্যৎতে অবশ্যই আপনার গিট ব্যবহার করতে হবে। গিট ইন্সটল করলেই তার সাথে গিট ব্যাস ও সাথে পাবেন, যেইটা আসলে একটি কমান্ড লাইন এবং এটা খুবই পাওয়ারফুল। অবশ্যই ডাউনলোড করে সেটাপের সময় গিট ব্যাশ সহ সেটাপ দিবেন। এটা কমান্ড লাইনে কাজ করার জন্য আপনাকে সম্পূর্ণ সুযোগ সুবিধা দিবে।
আশাকরি আপনি সব কিছু ঠিকঠাক ভাবে ডাউনলোড করে ইন্সটল করতে পেরেছেন। চলুন তাহলে আমরা কমান্ড লাইনের সাথে এবার পরিচিত হই।
১। whoami
এই কমান্ডের মাধ্যমে কম্পিউটারের বর্তমান ব্যবহারকারীর আইডি এবং নাম প্রিন্ট করা হয়।
whoami
২। Hostname
এই কমান্ডের মাধ্যমে কম্পিউটারের বর্তমান সিস্টেমের নাম প্রিন্ট করা হয়।
hostname
৩। Uname
এই কমান্ডের মাধ্যমে কম্পিউটারের বর্তমান সিস্টেমের তথ্য প্রিন্ট করা হয়।
uname
৪। Uname -a
এই কমান্ডের মাধ্যমে কম্পিউটারের বর্তমান সিস্টেমের বিস্তারিত তথ্য প্রিন্ট করা হয়।
uname -a
৫। Clear
এই কমান্ডের মাধ্যমে টার্মিনালের স্ক্রিন ক্লিয়ার করতে ব্যবহার করা হয়।
clear
৬। Pwd
এই কমান্ডের মাধ্যমে এখন কোন ফোল্ডারে রয়েছে তা দেখত ব্যবহার করা হয়।
Pwd মানে হচ্ছে Present Working Directory.
pwd
৭। Ls
কোনো ডিরেক্টরিতে কি কি ফাইল অথবা ফোল্ডার রয়েছে তা দেখতে এই কমান্ড দিতে হয়।
ls
৮। Ls -l
কোনো ডিরেক্টরিতে কি কি ফাইল অথবা ফোল্ডার রয়েছে তা লিস্ট আকারে দেখতে এই কমান্ড দিতে হয়।
ls -l
৯। Ls -a
কোনো ডিরেক্টরিতে লুকানো ফাইল অথবা ফোল্ডার রয়েছে তা দেখতে এই কমান্ড দিতে হয়।
ls -a
১০। Date
তারিখ দেখতে এই কমান্ড দিতে হয়।
date
১১। Time
সময় দেখতে এই কমান্ড দিতে হয়।
time
১২। Cal
ক্যালেন্ডার দেখতে এই কমান্ড দিতে হয়।
cal
১৩। Mkdir
ফোল্ডার তৈরি করতে এই কমান্ড দিতে হবে।
mkdir FolderName
ফোল্ডার নামের মাঝে স্পেস থাকলে কোটেশন মার্ক দিতে হবে নিচের মতো করে কমান্ড লিখতে হবে।
mkdir “Folder Name”
একাধিক ফোল্ডার তৈরি করতে নিচের মতো কমান্ড লিখতে হবে। স্পেস দিয়ে আপনার যতগুলো দরকার তৈরি করে নিবেন
mkdir Html Css Javascript
১৪। Cp
ফোল্ডার কপি করার জন্য এইভাবে কমান্ড দিতে হয়।
cp CopyFolder PasteFolder
ফাইল কপি করার জন্য এইভাবে কমান্ড দিতে হয়।
cp CopyFolder/index.html PasteFolder/index.html
১৫। Mv
ফোল্ডার মুভ করার জন্য এইভাবে কমান্ড দিতে হয়।
mv MoveFolder PasteFolder
ফাইল মুভ করার জন্য এইভাবে কমান্ড দিতে হয়।
mv MoveFolder/index.html PasteFolder/index.html
সতর্কতাঃ কমান্ড লাইনে কিন্তু কোন কিছু একবার রিমুভ বা ডিলেট করলে পারমানেন্টলি ডিলেট হয়ে যায় গ্রাফিকাল ইন্টারফেইসের মত কোন ওয়ার্নিং দেখাবে না। কমান্ড সঠিক হলেই তা কার্যকর হয়ে যাবে। সো বুঝে শুনেই যেকোন ফাইল বা ফোল্ডার ডিলেট করবেন।
১৬। Rm
যেকোনো ফোল্ডার রিমুভ বা ডিলেট করার জন্য এইভাবে কমান্ড দিতে হয়।
rm -r FolderName
ফাইল রিমুভ বা ডিলেট করার জন্য এইভাবে কমান্ড দিতে হয়।
rm index.html
১৭। touch
ফাইল তৈরি করতে এভাবে কমান্ড দিতে হয়। অবশ্যই ফাইলের নামের শেষে যে ফাইল তৈরি করতে চাচ্ছেন সেই ফাইলের এক্সটেনশনের নাম দিতে হবে নাহয় কমান্ড কাজ করবে নাহ।
touch index.html
একাধিক ফাইল তৈরি করতে এভাবে কমান্ড লিখতে হবে। স্পেস দিয়ে যতগুলো দরকার লিখে ইন্টার করলেই ফাইল তৈরি হয়ে যাবে।
touch index.html style.css readme.txt
একসাথে ডিরেক্টরি পরিবর্তন না করে ফাইল তৈরি করতে এই কমান্ড দিতে হয়
touch FolderName/index.html OhtersFolder/style.css
১৮। Cd
এক ফোল্ডার থেকে অন্য ফোল্ডারে যেতে বা ফোল্ডার পরিবর্তন করতে নিচের মতো কমান্ড দিতে হয়।
Cd মানে হচ্ছে Change Directory.
cd FolderName
ফোল্ডার পরিবর্তন করে ডেক্সটপে যাওয়ার জন্য এই কমান্ড দিতে হয়।
cd desktop
একবারে ফোল্ডারের ভিতর যাওয়ার জন্য এইভাবে কমান্ড লিখতে হয়। যে ফোল্ডারে যেতে চান তার ফাইল পাথ টা কপি করে এনে নিচের মতো কমান্ড দিলেই হবে।
cd C:\Users\Asif Adib\Desktop\Html
ফোল্ডারের ভিতর থেকে ব্যাক আসার জন্য নিচের মতো কমান্ড দিতে হয়।
cd..
১৯। Nano
ফাইল তৈরি করার পর ওই ফাইলের মাঝে কিছু লিখতে nano কমান্ড দিতে হয় তারপর Text Editor চালু হবে লেখার জন্য। লেখা শেষ হলে Ctrl + x চেপে ফাইল সেভ করে বের হতে হবে।
nano readme.txt
২০। Cat
এই কমান্ডের মাধ্যমে ফাইলের এর মাঝে কি লেখা আছে তা টার্মিনালে এ দেখা যাবে।
cat readme.txt
২১। Code .
এই কমান্ডের মাধ্যমে Visual Studio Code এর মাঝে চালু হবে pwd তে থাকা ফাইল ফোল্ডার।
code .
২২। Help
আপনার টার্মিনালে কি কি কমান্ড Available আছে তা জানার জন্য এই কমান্ড দিতে হবে।
help
২৩। History
এই কমান্ডের মাধ্যমে টার্মিনাল এ পর্যন্ত যত কমান্ড ব্যবহার করেছেন তা দেখাব।
history
২৪। Df
এই কমান্ডের মাধ্যমে হার্ডড্রাইভে কতো স্পেস খালি আছে তা দেখা যাবে।
df
২৫। Exit
টার্মিনাল বন্ধ করতে এই কমান্ড দিতে হয়
exit
আজকে অনেক কথা হলো। আশা করি, কমান্ড লাইন কি? ব্যাসিক কমান্ড লাইনের সাথে পরিচয় করাতে পেরেছি। কিভাবে কাজ করে কমান্ড লাইন সেটাও বোঝাতে পেরেছি। তারপরও যদি বুঝতে কোনো অসুবিধা হয় বা কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্টে জানাতে পারেন। আজ এ পর্যন্তই ভালো থাকবেন।
ধন্যবাদ!
এই লেখা পূর্বে আমার ব্লগে প্রকাশ করা হয়েছে।